Type Here to Get Search Results !

দোকান ভাঙে ভাঙুক, রামলালার মন্দির তো হবে! বুলডোজার যোগীর পাশেই আছে অযোধ্যা

দোকান ভাঙে ভাঙুক, রামলালার মন্দির তো হবে! বুলডোজার যোগীর পাশেই আছে অযোধ্যা
গাড়ি আর যাবে না। হাত তুলে আটকে দিলেন রাম জন্মভূমি থানার কর্তব্যরত কনস্টেবল। তার পর ‘হাই সিকিউরিটি জোন’ লেখা ভয়ালদর্শন ব্যারিকেডের ওপার থেকে মুখ বাড়িয়ে আদেশ দিলেন, ‘‘পিছে করো গাড়ি! আভি পিছে করো!’’

আরে! পত্রকার তো। রামলালার মন্দিরে যেতে চাই! কার্ড দেখাব?

দেখা গেল, উত্তরপ্রদেশের পুলিশ (আসলে রাম জন্মভূমি থানার পুলিশ) পত্রকার-টত্রকার বিশেষ বোঝে না। অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডও নয়। তারা শুধু বোঝে হলুদ পাস। যেটা কিছু দূরের কোতোয়ালি থানা থেকে গিয়ে নিয়ে আসতে হবে। কিন্তু সেই চক্করে একবার পড়লে তো গোটা দিনটাই মাটি। অতএব মানে মানে গাড়ি পিছিয়ে রওনা হয়ে পড়া গেল ঘুরপথে।

রামলালার মন্দিরে যাওয়ার অনেক পথ। কিন্তু একটি ছাড়া সব ক’টিতেই কড়া প্রহরা। সেই ভয়ঙ্কর দেখতে ব্যারিকেড। পদে পদে ঠোক্কর। দীর্ঘ তিন দশক আগে কারসেবকদের (‘কার’ অর্থাৎ, ‘ঘর’। ঘরের সেবক। যা অপভ্রংশে ‘করসেবক’ বলে সাধারণ্যে পরিচিত) হাতে বাবরি মসজিদ ধ্বংস হয়েছিল এই শহরে। গোটা ভারতের রাজনীতিকে পাল্টে দিয়েছিল যে ঘটনা। যে ঘটনার ক্ষত এখনও, এতদিন পরেও বহন করছে গোটা দেশ। ভবিষ্যতেও করবে। যে ঘটনার কথা ভুলিয়ে দেওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করছে বিজেপি। ভবিষ্যতেও করবে।

‘উত্তরপ্রদেশের ভোট-বুক’ সিরিজ লিখতে এসে সরযূ নদীর তীরে অযোধ্যায় আসা স্বাভাবিক। এটা জেনেই যে, এই মন্দিরশহর যোগী আদিত্যনাথের ভক্ত। অযোধ্যার ভোট পদ্ম ছাড়া অন্য কোনও লতাপাতায় যাবে না। তবু অযোধ্যায় আসা, যোগী-বর্ণিত ‘ভব্য রামমন্দির’ নির্মাণের কাজ কতটা এগোল তা সরেজমিনে দেখতে। আরও দেখতে যে, অযোধ্যার রামমন্দির নির্মাণকে কেন্দ্র করে সারা শহরে যে কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে, তার কী অবস্থা। বিশেষত, যখন যোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, রামমন্দিরে যাওয়ার রাস্তা বানাতে বুলডোজার নামাবেন। যে কারণে অযোধ্যার অলিগলিতে তাঁর নামই হয়ে গিয়েছে ‘বুলডোজার যোগী’।

বড় রাস্তার পাশেই ‘সুগ্রীব কিলা’ (রামচন্দ্র লঙ্কাজয়ের পর যখন অযোধ্যায় ফেরেন, তখন তাঁর সঙ্গেই এসেছিলেন ভ্রাতা লক্ষ্মণ, ভক্ত হনুমান, বানররাজ সুগ্রীব, জাম্বুবান। সকলকেই জমি-বাড়ি দিয়ে অযোধ্যায় থিতু করেন রাম। হনুমানকে ‘কোতোয়াল’ পদ দিয়ে তাঁকে দেন ‘হনুমানগড়ী’। সুগ্রীবকে দেন ‘সুগ্রীব কিলা’)। তার পাশ বরাবর ধুলো-ওড়া কাঁচা মাটির জমি দিয়ে যেতে হয় মন্দিরে। সেই জমিতে ঢোকার মুখে একটা আস্ত বাস ভর্তি ব্ল্যাক ক্যাট কমান্ডো। নিশ্চয়ই কোনও ভিভিআইপি-র জন্য হবে। ধুলো-ওড়া জমিতে দাঁড়িয়ে বুলডোজার, পে-লোডার। তার ধার ঘেঁষে চলেছেন পুণ্যার্থীর দল। পথের ধারে পসরা নিয়ে বসেছেন লোকজন। প্রতিটি ডালায় উড়ছে উজ্জ্বল গেরুয়া ঝান্ডা। রামচন্দ্রের ছবি এবং তার পাশে ‘জয় শ্রীরাম’ লেখা সিল্কের কাপড়ে পিছলে যাচ্ছে ফেব্রুয়ারির রোদ্দুর।

ধুলোবালির জমি গিয়ে শেষ হয়েছে কংক্রিটের বাঁধানো রাস্তায়। চওড়ায় মেরেকেটে ফুটদশেক। রাস্তার পাশে টিয়াপাখি নিয়ে সার সার জ্যোতিষী। যদিও তাঁদের খুব একটা পসার আছে বলে মনে হল না। রাস্তাটা যেখানে সামান্য ডানদিকে বেঁকেছে, সেখানে বাঁদিক থেকে শুরু হয়েছে প্রায় দু’মানুষ উঁচু হলদে রঙের লোহার রেলিং। গারদের মতো। তার উপরে আবার কাঁটাতারের বেড়া। তারও ১৫ ফুট ভিতরে হুবহু একই রকমের লোহার রেলিং। সুপ্রাচীন সেই দুই গারদের মধ্যে অজস্র লতাগুল্ম গজিয়ে উঠেছে। ঝোপঝাড়ে ঢাকা। সেই রাস্তা দিয়ে আরও এগোলে একটা মর্চে-ধরা ড্রপগেট। তার পরেই শুরু হয়ে গেল গলির দু’পাশে অজস্র ভক্তিমূলক দোকান। যেমন যে কোনও তীর্থক্ষেত্রে হয়। অযোধ্যার অবশ্য মাহাত্ম্যই আলাদা। হিন্দু ধর্মের সাতটি মহাগুরুত্বপূর্ণ তীর্থক্ষেত্রের একটা, সেটা বড় কথা নয়। রাজনৈতিক মহিমায় অযোধ্যা পয়লা নম্বরে।
ঢুকতে গিয়ে সেটাই মনে হল, নিরাপত্তার বাড়াবাড়িতেও!

সরু রাস্তাটা গিয়ে ধাক্কা খেয়েছে একটা সাদা একতলা বাড়িতে। হিন্দিতে পরিচয় লেখা ‘রঘুপতি লাড্ডু প্রসাদম’। অর্থাৎ, এখানে রঘুপতির লাড্ডু প্রসাদ পাওয়া যায়। সাদা পাঁচিল-ঘেরা চত্বর। সেই পাঁচিলের উপর ভাঙা কাচের টুকরো বসানো। ভিতরে অম্বাদেবীর মন্দির। বাইরে সার সার দোকান। প্রতিটিতে ‘লকার’ রয়েছে। নিরাপত্তার বিধিনিষেধ মেনে ওই লকারে নিজের জিনিসপত্র রেখে তালা দিয়ে চাবিটি নিয়ে যাওয়া যায় ভিতরে।

কোনও ইলেকট্রনিক বস্তু নিয়ে ঢোকা যাবে না। ঘড়ি, মোবাইল, ক্যামেরা, কলম, ল্যাপেল যাবতীয় কিছু, যার মধ্যে ছবি তোলার কোনও মাধ্যম থাকলেও থাকতে পারে। তবে চামড়ার বেল্ট বা ওয়ালেটে কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। 




Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.